কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পোলট্রি ফিডে ভারী ধাতু থাকবে কেন

পোলট্রি ফিডের গুণমানের উপর নির্ভর করে ঐ প্রাণীর মাংস কতখানি স্বাস্থ্যসম্মত হইবে। কেবল পর্যাপ্ত খাদ্যের সংস্থান করিলেই হয় না, খাদ্যটি নিরাপদ কি না—তাহাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, অনিরাপদ খাদ্য স্লো পয়জনের মতো। শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি সৃষ্টির নেপথ্যে প্রধান অনুঘটকের কাজ করিয়া থাকে অনিরাপদ খাদ্য। যেমন বলা হইয়া থাকে—‘পানি নহে, বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন’; তেমনই খাদ্য নহে নিরাপদ খাদ্য আমাদের একটি সুস্থ শরীর তৈরি করিয়া থাকে। কিন্তু সম্প্রতি একটি দৈনিকে নিরাপদ খাদ্য লইয়া যেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে। সমস্যাটি পোলট্রি মুরগির মাংসে। দেশে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের বড় একটি উত্স পোলট্রি মুরগির মাংস।

মূলত বাণিজ্যিকভাবে খামারে চাষ করা মুরগিই পোলট্রি মুরগি হিসাবে পরিচিত। এইগুলি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় সাধারণ মানুষের নিকটও ভীষণ জনপ্রিয়। কিন্তু আশঙ্কার কথা হইল দেশে এই সকল মুরগির মাংসে পাঁচটি ভারী ধাতুর উচ্চমাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গিয়াছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হইয়াছে, পানি, দূষিত পরিবেশ ও নিম্নমানের পোলট্রি ফিডের কারণে মুরগির শরীরে এই সকল ধাতু প্রবেশ করিতেছে, যাহা খাইবার ফলে তৈরি হইতেছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। চলতি বত্সরের মাঝামাঝি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশন রিসার্চ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশ পাইয়াছে। ইহাতে ঢাকার সাভারের ১২টি বাণিজ্যিক খামার হইতে ৩৬টি মুরগি নমুনা হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

গবেষণায় মুরগির মাংসের নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি এইগুলির পানীয় জল ও খাবার পরীক্ষা করা হয়। মাংস, পানি ও মুরগিকে দেওয়া খাদ্যে লৌহ, তামা, দস্তা, আর্সেনিক, নিকেল, ক্রোমিয়াম, স্ট্রোনিসিয়াম, পারদ ও সিসার উপস্থিতি রহিয়াছে কি না—তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখা যায়—মাটি, পানি, খাবার ও অন্যান্য উত্স হইতে মুরগির শরীরে দূষণ ছড়াইয়া পড়িতেছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়াছে—মুরগির মাংসে আর্সেনিক, নিকেল, ক্রোমিয়াম, পারদ ও সিসার মতো ভারী ধাতু ক্ষতিকর মাত্রায় উপস্থিত। আশঙ্কার কথা হইল—মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১০৪ গুণ আর্সেনিক, ৫ দশমিক ৫৮ গুণ নিকেল, ৩ গুণ ক্রোমিয়াম, ২ দশমিক ৮ গুণ পারদ ও ৪ দশমিক ৬ গুণ সিসা পাওয়া যায়। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, বিষয়টি দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগের।

জানা গিয়াছে, মূলত অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের খাবার খাওয়াইবার ফলেই এই সকল ভারী ধাতু মুরগির শরীরে ঢুকিতেছে। ফিডগুলো তৈরি, মোড়কজাত ও বাজারজাত করার সময় শতভাগ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না। ফলে এইগুলিতে ধাতুর উপস্থিতি রহিয়া যায়—যাহা দিন শেষে মুরগির শরীরে প্রবেশ করে। গবেষকরা বলিতেছেন, এই সকল ক্ষতিকর ধাতু খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করিলে মানবদেহে তাত্ক্ষণিক কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না বটে। তবে দীর্ঘদিন ধরিয়া এইগুলি শরীরে প্রবেশ করিলে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্যানসার সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি হয়। ইহা ছাড়া অন্যান্য রোগের ঝুঁকি থাকে ৪২ শতাংশ। গবেষকরা আরো জানাইয়াছেন, বাজারে বিক্রয়ের ৭২ ঘণ্টা পূর্বে কোনো মুরগির শরীরে হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হইলে সেই মুরগি খাওয়া মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কোনো কোনো খামারি অতি মুনাফার লোভে পোলট্রি মুরগির ওজন বাড়াইতে হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন। ইহা ছাড়া বিক্রয়ের সময় মুরগিগুলিকে যেন সতেজ দেখায় সেই জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধও প্রয়োগ করা হয়।

আমরা মনে করি, শুধু পোলট্রি নহে, ডেইরি, মাছ বা যে কোনো খাদ্য শতভাগ নিরাপদ হইতে হবে। ইহার জন্য জনসচেতনতা, নিরাপদ খাদ্য আইন প্রয়োগ ও খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে মানসম্মত পরীক্ষাগার স্থাপন করা জরুরি। পাশাপাশি মানুষের মধ্যেও সচেতনতা সৃষ্টি করিতে হইবে। ইহার ব্যত্যয়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হইবে না।

পাঠকের মতামত: